আজ ২৬শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

হাসপাতালে হামলা স্বচক্ষে মৃত্যু দেখলেন নার্স-চিকিৎসকরা


আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দে চমকে ওঠেন ফিলিস্তিনের হগাজা নগরীর আল-আহলি আল-আরাবি হাসপাতালের অর্থোপেডিক সার্জারির প্রধান ফাদেল নাইম। মুহূর্তেই টুকরো টুকরো মৃতদেহ ও আহত মানুষে পরিপূর্ণ একটি হাসপাতাল দেখতে পান তিনি। মানুষ চিৎকার করছিল সাহায্যের জন্য- ‘আমাদের সাহায্য করুন।’ ফাদেল নাইম তার বিভাগের আরও কয়েকজন চিকিৎসক ও নার্সদের সঙ্গে নিয়ে আহতদের বাঁচাতে ছোটাছুটি শুরু করেন। কিন্তু খুব বেশি মানুষকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি তাদের পক্ষে। আহতরা ছটফট করতে করতে তাদের চোখের সামনেই মারা যান। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গত মঙ্গলবার গাজার আল-আহলি আল-আরাবি হাসপাতালে হওয়া হামলায় নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলেন হাসপাতালটির চিকিৎসক ফাদেল নাইম। একই রকম অভিজ্ঞতা ওই হাসপাতালের অন্যান্য চিকিৎসক ও নার্সদেরও।

ফিলিস্তিনের গাজাবাসীদের জন্য নিরাপদ বলে কোনো জায়গা নেই- সেটাই যেন আরেকবার প্রমাণ হলো গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নগরীর আল-আহলি আল-আরাবি হাসপাতালে ভয়াবহ বিমান হামলার পর। নিরাপত্তার আশায় ওই হাসপাতালে আশ্রয় নিয়েছিল কয়েক হাজার মানুষ। কিন্তু গত মঙ্গলবার হাসপাতালটিতে ছোড়া রকেট হামলায় সেখানে আশ্রয় ও চিকিৎসা নেওয়া প্রায় ৫০০ মানুষ নিহত হয়েছে। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ও হামাস বিস্ফোরণের জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছে। এদিকে ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ) বলেছে, প্যালেস্টাইন ইসলামিক জিহাদ গ্রুপ রকেট ছুড়ে এ হামলা চালিয়েছে বলে তাদের কাছে প্রমাণ আছে।

গত বুধবার হামাস-ইসরায়েল সংঘাত ১২তম দিন পার করল। সংঘাতে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৪৭৮ জন এবং আহত ১২ হাজার ৬৫ জন। অন্যদিকে ইসরায়েলে নিহত হয়েছে ১ হাজার ৪০৩ জন এবং আহত হয়েছে ৩ হাজার ৮০০ জন।

এদিকে হাসপাতালে হামলার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছে হামাস। হামাসের একজন কর্মকর্তা ওসামা হামদান লেবাননে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সমস্ত পশ্চিমা দেশগুলো যারা ইসরায়েলকে সমর্থন করে, তারাই গাজার বেসামরিক মানুষদের বিরুদ্ধে এ যুদ্ধের সম্পূর্ণ দায়ভার বহন করে। ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস গাজার হাসপাতালকে লক্ষ্যবস্তু করাকে ‘গণহত্যা’ বলে নিন্দা করেছেন। তবে আইডিএফ দাবি করেছে, এ হামলা প্যালেস্টাইন ইসলামিক জিহাদ গ্রুপের। এ দলটি গাজা থেকে রকেট উৎক্ষেপণ করেছিল, যা লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে ব্যর্থ হয়ে ওই হাসপাতালে গিয়ে পড়েছে।

হাসপাতালে হামলার পর বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। এ হামলা নজিরবিহীন মাত্রার উল্লেখ করে এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। এর মধ্যে গতকাল বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তেলআবিবে গিয়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে দেখা করে হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইসরায়েলের প্রতি তাদের পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে এসেছেন। সেই সঙ্গে তিনি হাসপাতালে হামলার পেছনে ইসরায়েল নয়, ফিলিস্তিনি ‘সন্ত্রাসীদের’ দায়ী করেন। তবে হামাস ফিলিস্তিনের সব মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে না উল্লেখ করে বাইডেন ফিলিস্তিনের নিরপরাধ এবং যুদ্ধের মধ্যে আটকেপড়া মানুষদের জীবনরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করতে নেতানিয়াহুর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
গাজাহাসপাতালহামলানার্স চিকিৎসক


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর